



সিরাজগঞ্জ জেলা
16 Jan 2025 By -
সিরাজগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এটি যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর। সিরাজগঞ্জ জেলার পরিচিতি:
প্রতিষ্ঠা
সিরাজগঞ্জ জেলা ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়। এর পূর্বে এটি পাবনা জেলার একটি মহকুমা ছিল।
ভৌগোলিক অবস্থান
- অবস্থান: রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত।
- সীমানা: উত্তরে বগুড়া, দক্ষিণে মানিকগঞ্জ ও পাবনা, পূর্বে টাঙ্গাইল, এবং পশ্চিমে নাটোর ও পাবনা জেলা।
- নদী: যমুনা নদী জেলা জুড়ে প্রবাহিত, যা জেলার কৃষি, বাণিজ্য, এবং পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশাসনিক বিভাগ বা সিরাজগঞ্জ জেলার থানা কয়টি ?
এই জেলাটিতে ৯টি উপজেলা, ৮টি থানা এবং ৬টি পৌরসভা, ৮২টি ইউনিয়ন, ১,৫৫২টি মৌজা এবং ২,০১৬টি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়েছে। উপজেলাগুলো হলো:
- সিরাজগঞ্জ সদর
- উল্লাপাড়া
- শাহজাদপুর
- কাজীপুর
- বেলকুচি
- কামারখন্দ
- রায়গঞ্জ
- তাড়াশ
- চৌহালি
সিরাজগঞ্জ জেলার মোট জনসংখ্যা
সিরাজগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখের কাছাকাছি। এখানকার মানুষ মূলত বাংলা ভাষায় কথা বলে।
অর্থনীতি
সিরাজগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম একটি শিল্পসমৃদ্ধ জেলা।
- কৃষি: ধান, পাট, গম, ও অন্যান্য শস্যের উৎপাদনে জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- শিল্প: বেলকুচির তাঁত শিল্প ও শাহজাদপুরের তাঁত শিল্প দেশের সুতি কাপড় শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিক্ষা
জেলার প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, শাহজাদপুর সরকারি কলেজ, উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ, উল্লাপাড়া আকবর আলী কলেজ, বেলকুচি সরকারি কলেজ এবং অন্যান্য স্কুল ও মাদ্রাসা।
সিরাজগঞ্জ জেলার সকল পর্যটন স্থান / সিরাজগঞ্জ জেলার বিখ্যাত স্থান
সিরাজগঞ্জে অনেক ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে:
- রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি, শাহজাদপুর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানটি সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
- যমুনা সেতু: এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় সেতু এবং জেলার অন্যতম আকর্ষণ।
- চলনবিল: বর্ষাকালে চলনবিলের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
- তাড়াশের দুর্গ: প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা।
- খাজা পীর সাহেবের মাজার ও মসজিদ (এনায়েতপুর, চৌহালী)
- হযরত আব্দুল আলী বাকী শাহ শরীফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার (নয়াগাঁও, তারাশ)
- বেহুলার বাসভিটা (তারাশ)
- শিব মন্দির (তারাশ)
- রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি (শাহজাদপুর)
- শ্রী শ্রী মহাপ্রভুর আখড়া
- গোপীনাথ বিগ্রহা
- কালিকা দেবী বিগ্রহা
- জয়সাগর (রায়গঞ্জ)
- প্রতাপ দীঘি (রায়গঞ্জ)
- এলিয়ট ব্রিজ বা লোহার পোল (১৮৯৩ সালে নির্মিত)
- মক্কাহৌলিয়া মসজিদ (পঞ্চদশ শতাব্দী, উল্লাপাড়া)
- নবরত্ন মন্দির (উল্লাপাড়া)
সিরাজগঞ্জ জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
সিরাজগঞ্জের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পল্লীগীতি, লোকনৃত্য, এবং তাঁত শিল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পত্রিকা
- দৈনিক: কলম সৈনিক, যমুনা প্রবাহ, যমুনা সেতু
- সাপ্তাহিক: যমুনা বার্তা, সাহসী জনতা, যা বলিব সত্য বলিব, সুন্দর বার্তা, আনন্দ ভোর, সাপ্তাহিক উল্লাপাড়া
- বিলুপ্ত: মাসিক যমুনা, সাপ্তাহিক সমাজযুগ, সিরাজগঞ্জ সমাচার, হিতৈষী
সিরাজগঞ্জ জেলার ইতিহাস
১৯২২ সালে, খেলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে সালাঙ্গা হাটে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে পুলিশ গুলি চালালে অনেক মানুষ নিহত ও আহত হন। এটি "সালাঙ্গা আন্দোলন" বা "সালাঙ্গা গণহত্যা" নামে পরিচিত।১৯৪২ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ সম্মেলনে যোগ দিতে সিরাজগঞ্জে আসেন। ১৯২৮ সালে মহাত্মা গান্ধী এবং সুভাষ বসু ব্রাহ্ম সমাজের সম্মেলনে যোগ দিতে সিরাজগঞ্জে এসেছিলেন। ১৯২৪ সালে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস পার্টির সম্মেলনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলিম চুক্তি গৃহীত হয়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৩২ সালে "তারুণ্য মুসলিম সম্মেলনে" সভাপতিত্ব করতে সিরাজগঞ্জে আসেন। ১৯৪০ সালে এ কে ফজলুল হক সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তারাশ উপজেলার নয়াগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের একটি যুদ্ধ হয়, যেখানে পাক সেনারা পরাজিত হয় এবং প্রায় ১৫০ জন পাক সেনা নিহত হয়। ১১ থেকে ১৪ ডিসেম্বর শৈলাবাড়িতে পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি যুদ্ধ হয়, যেখানে পাক সেনারা পরাজিত হয়। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জ মুক্ত হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদী
যমুনা, বড়াল, ইছামতি, করতোয়া এবং ফুলঝুড়ি।
সরকারি ওয়েবসাইট
এছাড়াও আপনি সিরাজগঞ্জ জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল তথ্য আমাদের ওয়েবসাইট এর মাদ্ধমে জানতে পারেন।