
চলন বিল ও তার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরন।
15 Apr 2025 By -
চলন বিল এ দেশের উত্তরবঙ্গের একটি বৃহৎ বিল। এই বৃহৎ বিলটি অনেক গুলা ছোট বিল নিয়ে গঠিত হয়েছে। এই বিলটি তিনটি জেলা তথা সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিলটি যমুনা নদীর পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এই বিলের মধ্যে অসংখ্য পরিমাণে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে।
চলন বিল কোথায় অবস্থিত
চলন বিল নামের এই বিশাল বিলটি প্রায় নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার নয়টি থানা নিয়ে বিস্তৃত। সিরাজগঞ্জ এর তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলা সহ নব গঠিত সলঙ্গা থানার আংশিক এলাকা জুড়ে এই বিশাল বিলটি অবস্থিত। নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম জুড়ে এই বিলটির অবস্থান এবং পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর এলাকা জুড়ে এই বিলটির অবস্থান।
চলন বিল এর আয়তন
চলন বিল এর আয়তন অনেক ছিল কিন্তু এখন হ্রাস পেয়ে দাড়িয়েছে ১১৫০ বর্গকিলোমিটার। এর দৈর্ঘ্য পূর্ব - পশ্চিমে ৩২ মাইল। আর প্রস্থ উত্তর - দক্ষিণে সাড়ে ২৪ মাইল। কিন্তু বর্তমানে যে পরিমাণ পলি জমা হচ্ছে তাতে অল্প দিনের মধ্যে এর আয়তন আরো কমে যাবে। তবে এই বিলের মত এতো বড় বিল শুধু বাংলাদেশে কেনো পাক ভারত উপহাদেশের অন্য কোথাও নাই বা দেখা যায় না।
এই বিলের মধ্যে দিয়ে যে নদী প্রবাহিত হয়েছে
এই বিশাল বিলের মধ্যে দিয়ে আত্রাই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
চলন বিলের মাছ ও উদ্ভিদ
এই বিশাল বিলে অসংখ্য পরিমাণে মাছ ও উদ্ভিদ রয়েছে। এই বিলের মধ্যে রয়েছে দেশী প্রজাতির অনেক ধরনের মাছ। আর বর্ষার সময় অনেক মানুষের জীবিকার উৎস হয়ে দাঁড়ায় এই বিল। এই বিলে বর্ষার সময় ধরা পড়ে অনেক ধরনের মাছ যেমন: বোয়াল, শল, দেশী পুটি, মাগুর, শিং, টাকি, পাবদা সহ আরো ধরা পড়ে রুই, কাতলা, বিগ হেড, মৃগেল সহ নানান প্রজাতির মাছ। এই বিলের চারদিকে তাকালেই দেখা যায় অনেক ধরনের গাছ পালা যেগুলা বিলের শুন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে দেয়। আর এই গাছ পালার মধ্যে রয়েছে ঢল কমলি, বাবলা, নল, শিমুল ও খেজুরের গাছ। মাছ ছাড়াও এই বিলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ব্যাঙ, কচ্ছপ ও বিভিন্ন জাতের সাপ। এছারাও সেখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর।
চলন বিল এর নাম করণ
"চলন বিল এর ইতিকথা" নামক গ্রন্থে সরদার আব্দুল হামিদ চলন বিল এর নামকরণের বিষয়ে কিছু কথা তুলে ধরেন। সেখানে পাওয়া যায় এই বিলের পানি ছিল চলমান কারণ এই বিলের সাথে সংযুক্ত ছিল বেশ কিছু ছোট বড় নদী। সেখানে সেই সময় বাস করতো চলা রাজ বংশের মানুষ। তাই হতে পারে এই চলা রাজ বংশ বা চলা বিল থেকে এর নামকরণ।
চলন বিল এলাকার মানুষের জীবন যাপন
চলন বিল এলাকার লোকজন বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে চলাফেরায় একটু কষ্ট করে। কারন তাদের এলাকার রাস্তা গুলা ভাল থাকে না, বর্ষাকালে পানি এসে আবার যখন চলে যায় তখন রাস্তা গুলা একদম খারাপ হয়ে যায়। তবে বর্ষাকালে পানির কারনে নৌকায় যাতায়াত করা তাদের জন্য অনেক ভাল হয়। এমনকি বর্ষাকালে মাছ ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। আবার দুরের পথ পারি দেবার ক্ষেত্রে বর্ষাকালই তাদের জন্য ভাল হয়।
পর্যটন এলাকা হিসেবে চলন বিলের ভূমিকা
পর্যটন এলাকা হিসেবে চলন বিল বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। কারণ বর্ষার সময় এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ ঘুরতে আসে। তবে বর্ষা ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে অনেকেই আসে এই বিলের সুন্দর্য উপভোগ করতে। কারণ সেই সময় সেখানে পানি থাকে না তাই লোকজন সেখানে বিভিন্ন আবাদ করে থাকে এবং দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। আর সেই আবাদের মধ্যে থাকে হলো সরষের আবাদ। আর বর্ষার সময় অনেক দূর দূরান্ত থেকে যখন মানুষ ঘুরতে আসে তখন মনে হয় সেখানে মানুষ অনেক দিন পর সবার সাথে দেখা করতে এসেছে। আর যখন বর্ষা আসে তখন গ্রাম গুলোকে মনে হয় এক একটা দ্বীপ খাড়া হয়ে আছে। আর এটাই হলো বর্ষার সময়ের মূল আকর্ষণ। আর সব কিছু মিলিয়ে যেনো এটা একটা শুন্দর্যের প্রতীক হিসেবে দাড়ায়। আর এখানে বর্ষার সময়ে দেখা মেলে অনেক প্রজাতির পাখিদের, তারা পানির স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে পানির উপর দিয়ে উড়ে বেরায়। আর আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল ও বাদ পরে না, তাকেউ দেখা যায় সেই সময়।